বাংলাদেশে সম্প্রচার হওয়া বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।

14 May, 2018

বাউরার ঐতিহ্যের স্মারক এই বাউরা সাব পোস্ট অফিস ।

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা বাজারটি সানিয়াজান নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় সুদুর অতীতে নদীপথে বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে বাউরা বাজারের একটা বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠে । ফলে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় বড় ব্যবসায়ী ও পাইকারদের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো এই বাউরা বাজার । পাট ও তামাক ক্রয়-বিক্রয়ের স্থান হিসাবে এই বাজারটি প্রসিদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষ করে দেশ বিভাগের পূর্বে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে সীমান্তের ওপার থেকে মারোয়ারী ব্যবসায়ীদের আগমনের ফলে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে বাউরা বাজারের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে ।
বাউরার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে তৎকালীন বৃটিশ আমলে এখানে ‘বাউরা সাব পোস্ট অফিস(BAURA SUB POST OFFICE ) নামে একটি ডাকঘর স্থাপন করা হয়। বৃটিশ আমলে পাটগ্রাম থানাটি ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার আওতাধীন হওয়ায় বাউরা সাব পোস্ট অফিসটি জলপাইগুড়ি প্রধান ডাকঘরের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে এবং পাটগ্রাম থানার কিয়দাংশ ও পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার ( বর্তমানে লালমনিরহাট) হাতীবান্ধা থানার পুরো অংশকে বাউরা সাব পোস্ট অফিসের আওতায় আনা হয় । দেশ-বিদেশের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ ও মানিঅর্ডারের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে লেনদেনের জন্যে বাউরা সাব পোস্ট অফিসটিই ছিল এতদাঞ্চলের মানুষের প্রধান মাধ্যম ।১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে এই অফিসটি রংপুর প্রধান ডাকঘরের আওতায় এবং পরবর্তীতে লালমনিরহাট নতুন জেলায় উন্নীত হলে এই বাউরা সাব পোস্ট অফিসটি লালমনিরহাট প্রধান ডাকঘরের আওতায় চলে আসে ।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই ডাকঘরটি ছিল হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের মানুষের জন্যে যোগাযোগ রাখার প্রধান মাধ্যম। অর্থ লেনদেন, গুরুত্বপূর্ণ চিঠি ও টেলিগ্রাম আদান-প্রদান করা হতো এই ডাকঘরটির মাধ্যমে। অফিস চলাকালীন সময়ে অফিসটির বারান্দা গ্রাহকদের উপস্থিতিতে মুখর থাকতো ।
বর্তমানে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং, ইমেইল, সামাজিক ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছানোর ফলে মানুষ এখন ডাকঘরের উপরে খুব একটা নির্ভরশীল নয় । তাই গ্রামীন জনপদের অন্যান্য ডাকঘরের ন্যায় বাউরা সাব পোস্ট অফিসটিও দিনদিন ঝিমিয়ে পড়ছে
পুনশ্চঃ উপরের ছবিতে বাউরা সাব পোস্ট অফিসটির বর্তমান ভবনের বাম পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকা বৃটিশ আমলের আংশিক হলুদ রঙের ভবনটি ছিল বাউরা সাব পোস্ট অফিসের মুল ভবন।
নীচের ছবিতে সঞ্চয় ব্যাংকিংয়ের একটি পাসবহি। একাউন্ট হোল্ডারের নাম আজগার আলী আহমেদ। তিনি আমার আপন জ্যাঠা। তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে এই একাউন্টটি বাউরা সাব পোস্ট অফিসে খুলেছিলেন।


শাহজাহান হোসেন (লিপু)


No comments:

Post a Comment