বাংলাদেশে সম্প্রচার হওয়া বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।

23 November, 2017

তিস্তা ব্যারেজ এখন বাঁমতীরের মানুষের কাছে গলার কাঁটা । দায়ী তৎকালীন বি এন পি নেতারা ।

১৯৭৯ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন রংপুর জেলার( বর্তমানে লালমনিরহাট) জেলার হাতীবান্ধা থানার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারেজের কাজ শুরু হলে সে সময়ের সরকারী দল বি এন পির স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নির্লিপ্ত ভুমিকার ও জিয়াউর রহমানের সিনিয়র মন্ত্রী( প্রধানমন্ত্রী মর্যাদায়) মশিউর রহমান যাদু মিঞার স্বৈরাচারী মনোভাবের কারনে বন্যা নিয়ন্ত্রন ও সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় লালমনিরহাটের সব কয়টি থানা/উপজেলা । খরা মৌসুমে সেচ সুবিধা প্রদান, বর্ষা মৌসুমে সেচ এলাকা থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করা তথা বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্যে অনেকগুলো ফেজ স্থাপন করা হয় । প্রায় সকল ফেজ বা ক্যানেল মশিউর রহমান যাদু মিঞার নিজ এলাকা নীলফামারী জেলার ভিতর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গেলেও লালমনিরহাট জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রন ও সেচ সুবিধা প্রদানের জন্যে কোনো ফেজ বা ক্যানেল যায় নি ।ফলে তিস্তা ব্যারেজের মুল প্রকল্পটি লালমনিরহাট জেলায় স্থাপিত হলেও এর সেবা থেকে এই জেলাই বঞ্চিত হয়ে পড়ে ।
তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের নক্‌সা অনুমোদন ও বাস্তবায়নের সময়ে লালমনিরহাটের সবকটি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন সরকারদলীয় নেতারা। লালমনিরহাট সদরে সংসদ সদস্য ছিলেন রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিঞা, কালীগঞ্জ আসনে ছিলেন মজিবর রহমান হেডমাষ্টার, হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন অধ্যক্ষ কাজী নুরুজ্জামান । জিয়াউর রহমানের অতি ঘনিষ্ঠজন হলেও এই তিন জন সংসদ সদস্য এবং বি এন পির অন্যান্য স্থানীয় নেতারা তিস্তাব্যারেজ প্রকল্প থেকে লালমনিরহাটবাসীর জন্যে স্থায়ী কোনো সেবা আদায় করে নিতে পারেননি ।
বর্ষা এলে ক্যানেলগুলো যাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্যে ব্যারেজ কতৃপক্ষ তিস্তার ডানতীরে ক্যানেলগুলো বন্ধ রাখে । ফলে নদীর পানি ফুলিয়ে-ফাপিয়ে উঠে এবং বাম তীরকে প্লাবিত করে ।
বি এন পি সরকার বা তৎকালীন নেতাদের ব্যর্থতার ফলে লালমনিরহাট জেলাবাসীকে প্রতি বছর ভোগান্তির শিকার হতে হয় । প্রয়োজনীয় পানির অভাবে যেমন বাম তীরে  যেমন ইরি চাষাবাদ ব্যহত হয় তেমনি বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল না থাকায় বন্যায় ভেসে যায় লালমনিরহাট জেলার বিস্তির্ণ জনপদ । নদীভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হয় লাখো মানুষের বাস্তু ভিটা ও আবাদী জমি ।
শাহজাহান হোসেন লিপু ।
Related post:তিস্তা ব্যারেজের মূল প্রকল্পটি লালমনিরহাট জেলায়, অথচ এর সেবা থেকে এই জেলাই বঞ্চিত ।

16 November, 2017

বড়খাতা রেলষ্টেশনঃ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন স্মৃতিধন্য ষ্টেশনটি একদা ছিল সৃজনী আড্ডার কেন্দ্র ।



BARAKHATA RAIL STATION

রেল স্টেশনটির নাম বড়খাতা, ইংরেজীতে বানানটি হলো Barakhata,  (স্টেশন কোড BKQ)স্টেশনটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলপথে অবস্থিত । তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বর্তমান লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে  বুড়িমারী পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার লম্বা জঙ্গল বা ডুয়ার্স এলাকা সাফ করে লাইনটি স্থাপন করেছিল বলে এই রেলপথটিকে বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলওয়ে বা  বি ডি আর লাইন বলা হয়ে থাকে । বি ডি আর লাইনের বড়খাতা স্টেশনটি ডি-গ্রেডের হলেও বিভিন্ন কারনে জনমানুষের মনে এটি এখনও অনন্য হয়ে আছে ।
১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পরে ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী ও ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের পদার্পন ঘটেছিল এই স্টেশনে । তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বড়খাতা নিবাসী আবুল হোসেন আহমদের বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্যে শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ ট্রেনযোগে বড়খাতা আসেন তাঁর আগমনীর খবর ইতোপূর্বেই ছড়িয়ে পড়লে নির্ধারিত দিনক্ষনে শত শত নারী-পুরুষ তাদের প্রিয় শিল্পীকে দেখার জন্যে রেলস্টেশনে জমায়েত হয়েছিলেন । ট্রেন থেকে নেমে  উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের অনুরোধে গান পরিবেশন করেছিলেন এই গুনী শিল্পী । তৎকালীন সময়ের অনেক মানুষ বৃদ্ধ বয়সে এসে এই স্মৃতিগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতেন ।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা অঞ্চলে সুস্থ্যধারার নাট্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বড়খাতা রেলস্টেশন চত্ত্বর । ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রত্যহ বিকেল বেলা আড্ডা দেয়ার জন্যে বড়খাতা অঞ্চলের সংস্কৃতমনা বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্টেশন চত্ত্বরের বিশালকায় কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষের ছায়াতলে মিলিত হতেন । জনাব নূরল ইসলাম(সিনিয়র শিক্ষক, বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়, পরবর্তীতে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, তৎপরে ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান), জনাব এস্তানুল হক ( বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, পরবর্তীতে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের শিক্ষক), আলী আখতার গোলাম কিবরিয়া, আজিজুল ইসলাম( পরবর্তীতে বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক), মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, এ টি এম তারিকুল ইসলাম শাহীন, শাহজাহান হোসেন লিপু সহ বিভিন্ন বয়সের প্রায়  অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি এই সৃজনশীল আড্ডায় নিয়মিত অংশ নিতেন । আড্ডার এই ধারা ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যহত ছিল ।
এই আড্ডার ফলাবর্তন হিসাবে তৎকালীন সময়ে প্রতিবছর বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন নাটক ও যাত্রাপালা মঞ্চস্ত হতো। নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করতেন তৎসময়ের যুবক রবিউল ইসলাম ও শাহজাহান আলীলালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজারও দর্শক টিকিটের বিনিময়ে এই সমস্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করত । শাহজাহান আলী বর্তমানে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক, রবিউল ইসলামের পিতার নাম আশরাফ আলী, তাঁর পৈত্রিক বাড়ী ছিল বড়খাতা অঞ্চলের পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামে । তিনি গত জুলাই, ২০১৭ তে কর্মস্থল কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসার পথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ।
----শাহজাহান হোসেন লিপু