“ আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ
মাসে তার হাঁটুজল থাকে......’’ রবি ঠাকুরের এই কবিতাটির মর্মার্থের সাথে অনেকটা
মিল খুঁজে পাওয়া যায় লালমনিরহাট জেলার সানিয়াজান নদীর । শীতকালে বা খরাকালে এই
নদীতে হাঁটু পরিমানের অধিক জল থাকে না । পায়ে হেটে লোকজন নদীর এপার-ওপার যাতায়াত
করে । কিন্তু বর্ষা এলে নদীর চিরচেনা রুপ পাল্টিয়ে গেলেও ইতোপূর্বে এই নদী
মানুষের জীবন যাত্রার উপরে তেমন একটা বিরুপ প্রভাব ফেলেনি । কিন্তু গত ১২ আগষ্ট
২০১৭ তারিখে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেবমোড়ের
নিকটে বাঁম তীরের একটি বাঁধকে ভেঙ্গে দিয়ে এই সানিয়াজান নদী ( The Saniajan river) উপজেলার ৩টি ইউনিয়নকে প্লাবিত করে । ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে পরে মানুষের
ঘরবাড়ী, অনেকের বাড়ীঘর পানিতে ভেসে যায়, ফসলী জমি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত
হয় । সড়কের পুল-কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।
বন্যাকবলিত মানুষ এখনও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে পারেনি ।
উল্লেখ্য এই নদীটি ভারত-তিব্বতের সীমান্ত ঘেঁষে
দন্ডায়মান হিমালয় পর্বতমালার একটি পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের কোচবিহার জেলার
মেখলিগঞ্জ সীমান্তের মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ৮নং বুড়িমারী
ইউনিয়নের উফারমারা মৌজার বামনদল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পাটগ্রাম উপজেলার
পানবাড়ী-দহগ্রামের নিকটে এসে সানিয়াজান নদী ( The
Saniajan river) দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ডান অংশটি
দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা সিটমহল দিয়ে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশের সাথে মিলিত হয় এবং বাম
অংশটি সানিয়াজান নাম নিয়েই পাটগ্রাম উপজেলার নয়া বাউরা-বাউরা হয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার
গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেবমোড় নামক স্থানে এসে তিস্তা নদীর সাথে মিলিত হয় ।
সানিয়াজান নদী ( The Saniajan river) কে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে তীরবর্তী কিছু মানুষ ও ভূমি দস্যু বা ভূমি-খেঁকোরা । নদীর দুই তীরে নদীর জমি
দখল করে বাড়ীঘর নির্মান করে তারা নদীটির স্বাভাবিক
প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করে তুলেছে। শুকনো মৌসুমে নদীর তলদেশ ভরাট করে অনেক চাষী
ভুট্টা ও ইরি চাষ করে থাকে । ফলে নদীটি দিনদিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে ।
তাই অতিবৃষ্টি বা সীমান্তের ওপার থেকে নেমে
আসা পানির ঢলে ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করে সানিয়াজান নদী ।
শাহজাহান হোসেন লিপু,
২২-০৮-২০১৭ খ্রীষ্টাব্দ ।