১৯ মে, ১৯৬১ ।

আসামে
বাংলাভাষার স্বীকৃতির জন্যে বরাক উপত্যকার লোকদের আহুত সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে দাবিয়ে
রাখার জন্যে কংগ্রেস সরকারের পুলিশের গুলিতে সেদিন নিহত হন অনেক বাংলাভাষা
প্রেমিক। বরাক উপত্যকায় তারাপুরের শিলচর রেল ষ্টেশন থেকে শেষ ট্রেনের যাত্রাটাকে
রুখতে পারলেই এদিনের মত হরতাল শেষ । কিন্তু সরকার পক্ষও বসে ছিল না। খোদ প্রধান
মন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও উড়ে এসেছেন গুয়াহাটিতে , কংগ্রেসি মূখ্যমন্ত্রী বিমল প্রসাদ চালিহার সঙ্গে তিনিও নজর রাখছেন
আন্দোলনের উপর। আসামে একমাত্র অসমীয়া ভাষাকেই চালু রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন
চালিহা। অরাজনৈতিক সংগঠন কাছার গনসংগ্রাম
পরিষদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই আন্দোলনে উত্তেজনা থাকলেও সহিংসতা ছিল না। বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে বিভিন্ন জায়গা থেকে
বন্দি-পিকেটারদের নিয়ে আধা-সামরিক জোয়ানদের গাড়ী ঢুকল শিলচর রেলষ্টেশনে । কৌতুহলী
সত্যাগ্রহীরা তাদের দেখতে উৎসুক হলেন। এ সময় উৎসুক জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়
জওয়ানেরা । ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়লেন ১২ জন ভাষাপ্রেমিক। নয়জন ঘটনাস্থলেই প্রান
হারান আর দুজন প্রান হারান হাসপাতালে ।বাকিরা এই বর্বোরোচিত
আঘাত সহ্য করেও রুখে দাড়ালেন। মৃত দেহ নিয়ে শিলচরে শুরু হলো মিছিল। পিছু হটতে
বাধ্য হলো আসাম সরকার। ১১ শহীদের রক্ত আর অগনিত মানুষের সংগ্রামের মাধ্যমে ।
দ্বিতীয় সরকারী ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলা ।
আসামে
বাংলাভাষার স্বীকৃতির জন্যে লেখা হলো শহীদ কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডি চরণ সুত্রধর, হীতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্র দেব, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরুনী দেবনাথ , শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, ধীরেন্দ্র সুত্রধর, সুকমল পুরকায়স্ত ও কমলা ভট্টাচার্যের নাম।
আসামের
বরাকপারের বাঙালীরা সেদিন দেখিয়ে দেন তাঁদের চেতনাকে দমিয়ে রাখা যায় না ।
No comments:
Post a Comment