বাংলাদেশে সম্প্রচার হওয়া বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।

21 April, 2017

' হাঁকাও গাড়ী তুই চিলমারীর বন্দর রে ' গানটি খ্যাত চিলমারীর অতীত ঐতিহ্যকে ফিরে পেতে চাই ।



অতীতের সকল স্বকীয়তা ও ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্রহ্মপুত্র নদের একসময়কার আশীর্বাদপুষ্ট নদী-বন্দর চিলমারী । দেশের ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় জাহাজ বা নৌযানের সাহায্যে পাটের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম চালানোর জন্যে কুড়িগ্রাম জেলার এই নদী-বন্দরটি একসময়ে অনন্য হয়ে উঠেছিল ।
বাংলাদেশে চিলমারীর অবস্থান ।
প্লাষ্টিকের বা পলিথিনের এই যুগে পাটের চাহিদা ও কদর কমে যাওয়ায়, অপরদিকে খরাকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এবং বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্রের অব্যহত ভাঙ্গনের ফলে চিলমারী যেমন অতীত ঐতিহ্যকে হারিয়েছে, তেমনি পানি গর্ভে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ । নদীর গর্ভে বাড়ীঘর হারিয়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে এখানকার অনেক মানুষ  এখন জীবন-জীবিকার সন্ধানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে । আসবাব পত্র শিল্পের জন্যে প্রসিদ্ধ এখানকার অনেক কাঠ-মিস্ত্রী বাস করছেন লালমনিরহাট জেলার বড়খাতা অঞ্চলে । তাঁদের হাতের নিপুন শৈলীতে তৈরী আসবাবপত্র গুলো যেন একটি ঘরের সৌন্দর্যকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয় । ব্রহ্মপুত্রের আগ্রাসনের ফলে বিতাড়িত হওয়া এই মানুষগুলো একটু সুযোগ পেলেই আলাপচারিতায় চিলমারীর অতীত ঐতিহ্যকে স্মরনে আনে ।
ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন
দেশ বিভাগের পূর্বে চিলমারীর নাম ও যশ খুব বিস্তার লাভ করতে না পারলেও দেশবিভাগের (১৯৪৭ খ্রীঃ)পরে এখানে কিংবদন্তীর কন্ঠশিল্পী ভাওয়াইয়া-সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের আগমনের মধ্য দিয়ে চিলমারী হয়ে উঠে উপমহাদেশের মানুষের কাছে অতিপরিচিত একটি স্থান হিসাবে ।
দেশ-বিভাগের কয়েক বছর পরে আমন্ত্রিত হয়ে আব্বাস উদ্দিন চিলমারীতে এলে  সেখানে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে তিনি গেয়ে উঠেন ‘ ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ী তুই চিলমারীর বন্দর রে ‘। আর এই গানটির ফলে এপার বাংলা-ওপার বাংলার মানুষের কাছে চিলমারী গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে বিবেচিত হতে থাকে ।
তখন এদেশে আকাশ সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেনি । সঙ্গীতে তখন ছিল না কৃত্রিমতার ছোঁয়া । আব্বাস উদ্দিন , আব্দুল আলীম , মোস্তফা জামান আব্বাসী, হরলাল রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়, ফেরদৌসী রহমান প্রমূখের কন্ঠে পরিবেশিত গানগুলোতে মাটির গন্ধ খুঁজে পাওয়া যেত । ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ী তুই চিলমারীর বন্দর রে ’ এই গানটি গেয়ে আব্বাস উদ্দিন আহমদ এই চিলমারীকে মা-মাটির বাংলাদেশে এক অমীয় সুরধারা হিসাবে স্বার্থকতা দান করেছেন ।

পাট শিল্প উহার হৃত গৌরব ফেরত পাক, পাউবো দ্বারা শাসিত হোক ব্রহ্মপুত্র নদ,  অতীত ঐতিহ্য ফিরে পেয়ে এগিয়ে যাক চিলমারী বন্দর ঠিক আগের মতই । আর এটিই আমাদের কামনা ।


পোষ্টটি লেখার স্থান ও তারিখ-
পুর্ব ফকির পাড়া, পোঃ বড়খাতা,
হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট।
২১-০৪-২০১৭ খ্রীষ্টাব্দ।

No comments:

Post a Comment