 |
BARAKHATA RAIL STATION |
রেল স্টেশনটির
নাম বড়খাতা, ইংরেজীতে বানানটি হলো Barakhata, (স্টেশন কোড BKQ) । স্টেশনটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলপথে অবস্থিত
। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বর্তমান লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার লম্বা জঙ্গল বা
ডুয়ার্স এলাকা সাফ করে লাইনটি স্থাপন করেছিল বলে এই রেলপথটিকে বেঙ্গল ডুয়ার্স
রেলওয়ে বা ‘ বি ডি আর’ লাইন বলা হয়ে থাকে । বি ডি আর লাইনের বড়খাতা স্টেশনটি ডি-গ্রেডের হলেও
বিভিন্ন কারনে জনমানুষের মনে এটি এখনও অনন্য হয়ে আছে ।
১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পরে ভারত
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী ও ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের পদার্পন ঘটেছিল
এই স্টেশনে । তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বড়খাতা নিবাসী আবুল হোসেন আহমদের
বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্যে শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ ট্রেনযোগে বড়খাতা আসেন ।তাঁর আগমনীর খবর ইতোপূর্বেই ছড়িয়ে পড়লে নির্ধারিত দিনক্ষনে শত শত
নারী-পুরুষ তাদের প্রিয় শিল্পীকে দেখার জন্যে রেলস্টেশনে জমায়েত হয়েছিলেন । ট্রেন
থেকে নেমে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের
অনুরোধে গান পরিবেশন করেছিলেন এই গুনী শিল্পী । তৎকালীন সময়ের অনেক মানুষ বৃদ্ধ
বয়সে এসে এই স্মৃতিগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতেন ।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা
অঞ্চলে সুস্থ্যধারার নাট্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বড়খাতা রেলস্টেশন
চত্ত্বর । ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রত্যহ বিকেল বেলা আড্ডা
দেয়ার জন্যে বড়খাতা অঞ্চলের সংস্কৃতমনা বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্টেশন চত্ত্বরের
বিশালকায় কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষের ছায়াতলে মিলিত হতেন । জনাব নূরল ইসলাম(সিনিয়র শিক্ষক, বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়, পরবর্তীতে একই
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, তৎপরে ফকিরপাড়া
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান), জনাব এস্তানুল হক
( বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, পরবর্তীতে রংপুর
পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের শিক্ষক), আলী আখতার গোলাম
কিবরিয়া, আজিজুল ইসলাম( পরবর্তীতে বড়খাতা উচ্চ
বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক), মুক্তিযোদ্ধা
আব্দুর রহমান, এ টি এম তারিকুল ইসলাম শাহীন, শাহজাহান হোসেন লিপু সহ বিভিন্ন বয়সের প্রায় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি এই সৃজনশীল আড্ডায় নিয়মিত
অংশ নিতেন । আড্ডার এই ধারা ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যহত ছিল ।
এই আড্ডার ফলাবর্তন হিসাবে তৎকালীন সময়ে
প্রতিবছর বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন নাটক ও যাত্রাপালা মঞ্চস্ত হতো।
নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করতেন তৎসময়ের যুবক রবিউল ইসলাম ও শাহজাহান আলী । লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত
হাজারও দর্শক টিকিটের বিনিময়ে এই সমস্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করত । শাহজাহান আলী বর্তমানে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক, রবিউল ইসলামের পিতার নাম আশরাফ আলী, তাঁর পৈত্রিক
বাড়ী ছিল বড়খাতা অঞ্চলের পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামে । তিনি গত জুলাই, ২০১৭ তে কর্মস্থল কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসার পথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ
হয়ে মারা যান ।
----শাহজাহান হোসেন লিপু